ইসলামের দৃষ্টিতে দোয়া কবুলের উপায়: কোন দোয়া কখন পড়লে দ্রুত কবুল হয়?
![]() |
ইসলামের দৃষ্টিতে দোয়া কবুলের উপায় |
দোয়া হলো মুমিনের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। আল্লাহ তাআলা বলেন:
"তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।" (সূরা গাফির: ৬০)
অনেক সময় আমরা দোয়া করি, কিন্তু মনে হয় দোয়া কবুল হচ্ছে না। আসলে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত ও সময় রয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করলে দোয়া দ্রুত কবুল হতে পারে।
দোয়া কবুলের শর্ত ও উপায়
১. একনিষ্ঠতা ও আন্তরিকতা:আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাসুল (সা.) বলেছেন— "আল্লাহ সেই বান্দার দোয়া কবুল করেন, যে একাগ্রচিত্তে দোয়া করে এবং তার মনোযোগ থাকে আল্লাহর প্রতি।" (তিরমিজি: ৩৪৭৯)
২. হারাম থেকে বেঁচে থাকা:যে ব্যক্তি হারাম খায়, পরিধান করে বা হারাম উপায়ে উপার্জন করে, তার দোয়া কবুল হয় না। (মুসলিম: ১০১৫)
৩. ধৈর্যশীল হওয়া:কখনো কখনো আল্লাহ বান্দার জন্য দোয়া বিলম্বে কবুল করেন, কারণ তিনি জানেন কোনটি তার জন্য উত্তম।
৪. আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ দিয়ে দোয়া শুরু করা:রাসুল (সা.) বলেন—
"যখন তোমাদের কেউ দোয়া করবে, সে যেন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করে, এরপর নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করে, তারপর নিজের প্রয়োজন আল্লাহর কাছে তুলে ধরে।" (তিরমিজি: ৩৪৭৭)
৫. দৃঢ় বিশ্বাস থাকা: দোয়া করার সময় দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ অবশ্যই তা কবুল করবেন।
কোন সময় দোয়া দ্রুত কবুল হয়?
১. তাহাজ্জুদ বা শেষ রাতে রাসুল (সা.) বলেছেন— "রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো।" (বুখারি: ১১৪৫, মুসলিম: ৭৫৮)
২. আজান ও ইকামার মধ্যবর্তী সময় এই সময়টি দোয়া কবুলের অন্যতম সময়। (তিরমিজি: ২১২)
৩. জুমার দিনে বিশেষ মুহূর্ত জুমার দিনে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, যখন দোয়া কবুল হয়। রাসুল (সা.) বলেন— "জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন মুসলিম বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে, আল্লাহ তাকে তা দান করেন।" (বুখারি: ৯৩৫, মুসলিম: ৮৫২)
৪. রোজার সময় ও ইফতারের আগে "রোজাদারের দোয়া ইফতারের সময় প্রত্যাখ্যাত হয় না।" (তিরমিজি: ২৫২৫)
৫. বৃষ্টি নামার সময় "দুটি দোয়া কখনো ফেরত দেওয়া হয় না— আজানের সময় এবং বৃষ্টি নামার সময়।" (আবু দাউদ: ২৫৪০)
৬. যুদ্ধক্ষেত্রে মুজাহিদের দোয়া যারা ইসলামের জন্য লড়াই করে, তাদের দোয়া খুবই শক্তিশালী হয়।
দ্রুত কবুল হওয়ার কিছু বিশেষ দোয়া
১. বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
" لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ "
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায-জালিমিন।
অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তুমি পবিত্র, আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা আম্বিয়া: ৮৭)
২. ঋণ মুক্তির দোয়া
"اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ "
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল-হাম্মি ওয়াল-হাজান...
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই, অলসতা, দুর্বলতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জুলুম থেকে রক্ষা চাই। (বুখারি: ৬৩৬৯)
৩. পারিবারিক কল্যাণের দোয়া
" رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ "
উচ্চারণ: রব্বি ইজআলনি মুকিমাস-সালাতি ওয়া মিন জররিয়্যাতি...
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে ও আমার সন্তানদের নামাজ কায়েমকারী করো। হে আমাদের রব! আমাদের দোয়া কবুল করো। (সূরা ইবরাহিম: ৪০)
৪. রিজিক বৃদ্ধির দোয়া
" اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ "
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা...
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে তোমার হালাল দ্বারা পরিতৃপ্ত করো এবং হারাম থেকে দূরে রাখো, তোমার অনুগ্রহে আমাকে মানুষের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে রক্ষা করো। (তিরমিজি: ৩৫৬৩)
আরো দেখুনঃ শবে কদরের দোয়া ও ফজিলত
আল্লাহ কখনো বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দেন না। তবে তিনি হয়তো তা সঙ্গে সঙ্গে কবুল করেন, অথবা দেরি করে উত্তম সময় দেন, অথবা বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
তাই আমাদের উচিত ধৈর্য ধরে একনিষ্ঠভাবে দোয়া করা, দোয়ার শুদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং দোয়া কবুলের উত্তম সময়গুলোতে আল্লাহর কাছে চাওয়া।
আল্লাহ আমাদের সকল দোয়া কবুল করুন। আমিন!
Comments